ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪

রেকর্ড সর্বনিম্ন তুলা রফতানি ভারতের

ভারতে ২০২২-২৩ তুলা বিপণন মৌসুম শেষ হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। এ মৌসুমে দেশটি সাড়ে ১৫ লাখ বেল (প্রতি বেলে ১৭০ কেজি) তুলা রফতানি করেছে বলে মনে করছে কটন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিএআই)। সে হিসেবে রফতানি রেকর্ড সর্বনিম্নে। খবর দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন।

এর আগে তুলা উৎপাদন ও ব্যবহারসংক্রান্ত কমিটি (সিসিপিসি) ৩০ লাখ বেল তুলা রফতানির প্রক্ষেপণ করেছিল। কিন্তু চীনসহ বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান সংকটে রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এ বিষয়ে মার্কিন কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য বলছে, ২০০৪-০৫ বিপণন মৌসুমে ভারত ২৩ লাখ ৫ হাজার বেল তুলা রফতানি করেছিল, যা ছিল সর্বশেষ সর্বনিম্ন। বিদায়ী মৌসুমে রফতানি তার চেয়েও কমেছে বলে জানায় সিএআই। ২০২১-২২ মৌসুমে দেশটি রফতানি করেছিল ৪৩ লাখ বেল।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে পড়ার প্রভাবে আমদানিকারক দেশগুলোয় তুলার চাহিদা দুর্বল। তার ওপর পণ্যটির দামও বেশি। এ দুটি বিষয় রফতানিতে ধস নামার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যবসায়ীরা জানান, এ মৌসুমে তুলা রফতানির পরিমাণ থাকবে অত্যন্ত স্বল্প। বাংলাদেশই এবার সবচেয়ে বেশি তুলা আমদানি করবে। বাকি আমদানিকারকদের মধ্যে আমদানি নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। রফতানিতে ধস নামার আরেকটি বড় কারণ চীনের আমদানি না করা। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটি স্থানীয় উৎপাদন থেকেই চাহিদা পূরণের প্রয়াস চালাচ্ছে। অন্যদিকে, ডলার সংকটে অন্যান্য বছরের তুলনায় বাংলাদেশও কম আমদানি করছে। ভারতীয় তুলার আরেক গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা ভিয়েতনাম। এ মৌসুমে দেশটিও আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

এদিকে রফতানির পাশাপাশি তুলা আমদানিও কমেছে বলে জানায় অ্যাসোসিয়েশন। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে ভারত সাড়ে ১২ লাখ বেল তুলা আমদানি করেছে। আগের মৌসুমে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ বেল।

রফতানি কমায় মজুদের পরিমাণ বেড়েছে। প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৯০ হাজার বেলে, আগের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী যা ছিল ২৩ লাখ ১৮ হাজার বেল। অন্যদিকে, আগের মৌসুমে মজুদ ছিল ২৪ লাখ বেল।

দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, বিদায়ী মৌসুমে দেশটির ১২৩ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা আবাদ হয়। এর আগের মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ১২৭ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে।

তুলা উৎপাদন ও ব্যবহারসংক্রান্ত কমিটির প্রাক্কলন বলছে, ২০২১-২২ মৌসুমে ভারতে ৩ কোটি ১১ লাখ ১৭ হাজার বেল তুলা উৎপাদন হয়েছিল। বিদায়ী মৌসুমে তা বেড়ে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার বেলে পৌঁছেছে।

এদিকে ২০২৩-২৪ মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক উৎপাদন ৩ শতাংশ কমার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ব্যবহারের পরিমাণ স্থিতিশীল থাকতে পারে। মৌসুম শেষে পণ্যটির মজুদও কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মার্কিন কৃষি বিভাগ এসব তথ্য জানিয়েছে।

তুলার বাজারদরে উত্থান-পতনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে চীন। দেশটিতে চাহিদা কমে গেলে পণ্যটির দাম নিম্নমুখী চাপে পড়তে পারে। চলতি বছরের বাকি সময়জুড়ে প্রতি পাউন্ড তুলার দাম ৮০ সেন্টের কাছাকাছি অবস্থান করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্কিন কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য বলছে, চলতি বছরের অক্টোবরে তুলার বৈশ্বিক উৎপাদন মৌসুম শুরু হবে। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে মৌসুম শেষ হবে। এ মৌসুমে ১১ কোটি ৪১ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ৩ শতাংশ কম। মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও উজবেকিস্তানে উৎপাদন বিপুল পরিমাণে কমে যাওয়ার আশঙ্কায় এ পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ। এদিকে ভারতেও পণ্যটির উৎপাদন কমার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত: